নিজস্ব প্রতিনিধি
Published:14 Feb 2024, 03:06 PM
পঞ্চগড়ে নজিরবিহীন কঠোর নিরাপত্তায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসা
পঞ্চগড় :
পঞ্চগড়ে সর্বাত্মক কঠোর নিরাপত্তার বেস্টনীতে চলছে আহমদিয়া মুসলিম জামাতের দুইদিন ব্যাপী ৯৯ তম বার্ষিক সালানা জলসা। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া পঞ্চগড় পৌর এলাকার আহমদনগরে এ জলসা উদযাপনে জেলা প্রশাসন নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। সর্বত্র সর্বোচ্চ নিরাপত্তার বেষ্টনীতে রয়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। এমন নিরাপত্তা জোরদারে নজিরবিহীন নিরাপত্তা বলে মনে করছেন জেলার মানুষ।
আইনশৃঙ্খলবাহিনী সদস্যদের মধ্যে রয়েছে ম্যাজিস্ট্রেটট, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন। এর মধ্যে বিজিবির ১৫ টি, র্যাবের ১৬ টি দল রয়েছে। নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত রয়েছে চার হাজারের বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। যা স্থানীয় পুলিশ, বিজিবি ছাড়াও রংপুর, রাজশাহী মেটোপলিটান থেকে পুলিশ সদস্য আনা হয়েছে। এপিবিএননের নেতৃত্বে আইনৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা শহর ও এলাকায় টহল দিচ্ছে।
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠিত সালানা জলসা স্থলসহ শহর ও পৌর এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে প্রচুর আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য। সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে সাইরেন বাজিয়ে গাড়ি বহর টহল দিতে দেখা যায়। পুরো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকায় পঞ্চগড় এখন পুলিশের শহরে পরিণত হয়েছে।
এ দিকে সালানা জলসা ঘিরে নিরাপত্তা প্রদানের কারণে পৌর এলাকাসহ বোদা উপজেলার স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসাসহ ২৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের অবস্থানের কারণে ৫ দিন পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জেলা প্রশাসন ৯ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের অবস্থানের স্বার্থে ‘১১ ফেব্রুয়ারি থেকে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রাখার কথা বলা হয়। সেই সাথে নির্ধারিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে পুলিশ সদস্যদের অবস্থানকালে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, খাবার পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশনসহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ হয়।
সালানা জলসার দায়িত্বরত জলসা প্রেস ও মিডিয়ার মাহমুদ আহমদ সুমন বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সালানা জলসা উদযাপন করতে চাই। এটি ২০ তারিখের পর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে ১৩-১৪ ফেব্রুয়ারিতে করা হচ্ছে। প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আমরা দুইদিন ব্যাপি সালানা জলসা উদযাপন করছি। এ উদযাপন ঘিরে আলেমরা বয়ান দিচ্ছেন ও ৬৯টি ভাষায় কুরআনের প্রদর্শনী রয়েছে। সমগ্র বিশ্বের শান্তি কামনা করে দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের এর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে।
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মূখপাত্র আহমদ তবশীর চৌধুরী বলেছেন, আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ধর্মকর্ম পালন করতে চাই। অতীতে আমাদের সম্প্রদায়ের নামে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত কওে আমাদের সম্প্রদায়ের দোকানপাট, বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে লুটপ্টা করে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে আমাদের সম্প্রদায়ের একজনকে পিটিয়ে মেরেছে।
জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। আহমদিয়া মুসলিম জামাতের বার্ষিক সালানা জলসা অনুষ্ঠান নিরাপদে করতে এবং সহিংসতা এড়াতে এবার ব্যাপক নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা যেন কেউ ঘটাতে না পারে এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর আছে।
জেলা পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বলেন, এবার আহমদিয়া মুসলিম জামাতের সালানা জলসাকে কেন্দ্র করেই তো মধ্যে প্রায় চার হাজার ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজিবি, র্যাব, এপিবিএন ও আনসার সদস্যরাও রয়েছে। তারা নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।
১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.কর্নেল যুবায়েদ হাসান বলেন, বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতার অংশ হিসেবে বিজিবি নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ করছে।
গত বছর ২ থেকে ৪ মার্চ ৯৮তম সালানা জলসা বন্ধ ও তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল ইসলাম ধর্মীয় বিভিন্ন সংগঠন। এটি ঘিরে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপর হামলা, তাদের দোকানপাট, ঘর বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ আহত হন। ওই ঘটনায় আরিফুর রহমান (২৮) ও জাহিদ হাসান (২৩) নামের দুই তরুণ মারা যান। ঘটনার পর ৩২টি মামলায় ১৪ হাজারের বেশি মানুষকে আসামি করা হয়।
এদিকে এবারও জলসা বন্ধের দাবিতে গত ২৮ জানুয়ারি সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ পরিষদ জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে। শুক্রবার ঢাকার বাইতুল মোকাররম মসজিদের সামনে বিক্ষোভ করে ইসলাম ধর্মীয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা জলসা বন্ধের দাবিতে রোড মার্চের হুশিয়ারি দেয়।
© দিন পরিবর্তন