দিন পরিবর্তন ডেস্ক
Published:28 Feb 2024, 07:59 PM
বিশ্ববিদ্যায়ে শিক্ষক নিয়োগ স্বজনপ্রীতি নয়, যোগ্যতাই হোক ভিত্তি
বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে জাতি গঠনের সর্বোচ্চ শিক্ষার ধাপ। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নিয়োগে যদি আত্মীয়তাকে প্রাধান্য দেয়া হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবে মেধাবীরা স্থান করে নিতে পারবেন না। এতে অমেধাবীরাই শিক্ষকতার আসনে বসবেন এবং তাদের সীমাবদ্ধ যোগ্যতার কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীরা আশানুরূপ জ্ঞান আহরণ করতে পারবেন না। ফলে এতে উচ্চশিক্ষার প্রক্রিয়া যেমন পিছিয়ে যাবে, এমনই পিছিয়ে যাবে জাতি।
দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক প্রভাবে ও স্বজনপ্রীতির কারণে সুযোগ্যদের বাদ দিয়ে কম যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এর সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এক সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে আত্মীয়তা ও দলীয় প্রভাব মুখ্য হয়ে উঠেছে। গত বছরের জুলাইয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়েছে উপাচার্য নুরুল আলমের দূর সম্পর্কের ভাগনিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন, কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে আত্মীয়তার সম্পর্ক, প্রশাসনিক পদে থাকা প্রভাবশালী কোনো শিক্ষকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং দলীয় প্রভাবের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানে দেশসেরা মেধাবীরা প্রতিযোগিতা করে স্থান পান। ওই সব শিক্ষার্থী শিক্ষাশেষে সগর্বে উচ্চারণ করেন যে, তারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা অর্জন করেছেন। অনেকে জাতীয় পর্যায়ে বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত। সেই ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি মেধাবীদের এড়িয়ে ব্যক্তিগত পছন্দকে প্রাধান্য দেয়া হয়, তাহলে শিক্ষার মান তলানিতে গিয়ে ঠেকবে- এতে কোনো সন্দেহ নেই।
এক সময় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একটা নীতি অবলম্বন করা হতো। এটাকে উচ্চশিক্ষাব্যবস্থায় একধরনের রীতি মনে করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিভাগের শিক্ষকসংকট থাকলে ওই বিভাগের সর্বোচ্চ ভালো ফল করা শিক্ষার্থীকে শিক্ষাশেষে একই বিভাগের শিক্ষকদের সন্তুষ্ট চিত্তে সমর্থনসাপেক্ষে নিয়োগ দেয়া হতো। এছাড়াও নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদন করা প্রার্থীদের কার ফলাফল উত্তম এবং বিদেশি মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের পাশাপাশি ডক্টরের ডিগ্রি আছে, কিংবা মানসম্পন্ন দেশি-বিদেশি জার্নালে গবেষণা নিবন্ধ ছাপা হয়েছে- এসব বিষয় নিয়োগের আগে নিরীক্ষণ করা হতো। কিন্তু এখন শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এর আগে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় প্রভাব ও আত্মীয়তাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। যার ফলে উচ্চশিক্ষার ধারা ক্রমান্বয়ে মানহীন হয়ে আসছে। উচ্চশিক্ষার বিশ্ব স্কোরে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একেবারে নিম্ন পর্যায়ে। আমাদের দেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এক সময় শিক্ষার মানের জন্য প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে অভিহিত করা হতো। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কোরিং এখন বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ধারে কাছে নেই।
বর্তমান সরকার দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন করেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে যদি রাজনৈতিক প্রভাব ও স্বজনপ্রীতি না থাকত, তাহলে জাতি বিশ্বের বুকে নিজেদের পরিচয়কে উজ্জ্বল করতে পারত। একটা জাতির যাবতীয় উন্নয়নে শিক্ষার গুরুত্ব সর্বাধিক। সেই শিক্ষা যদি দিন দিন প্রশ্নবিদ্ধ পর্যায়ে নেমে আসে, তাহলে সরকারের উচিত কারণগুলো অনুসন্ধান করা এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মান যে রাজনৈতিক প্রভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে, তা ক্ষমতাসীনরা নজরে রাখছেন বলে মনে হয় না।
আমরা মনে করি, ভবিষ্যতে উন্নত দেশ গঠনে অগ্রসর হতে হলে অবশ্যই শিক্ষাকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে হবে। দলীয় লেজুরভিত্তিকে কোনো শিক্ষক-কর্মচারী তো দূরের কথা উপাচার্য পর্যন্ত নিয়োগ দেয়ার আগে ভাবা উচিত। তা না হলে জাতি উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সমান তালে এগুতে ব্যর্থ হবে। আমরা আরো মনে করি, সরকার উচ্চশিক্ষার মানের বিষয়টিকে গভীরভাবে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেবে। কারণ, একটি জাতির অগ্রগতি হয় শিক্ষার ভিত থেকে। শিক্ষার ভিত মজবুত না হলে জাতি অন্যান্য সব ক্ষেত্রে সন্তোষজনক গতি পাবে না।
/মামুন
© দিন পরিবর্তন