১৪-অক্টোবর-২০২৪
১৪-অক্টোবর-২০২৪
Logo
সম্পাদকীয়

বেইলি রোড ট্রাজেডি, অপরাধীরা যেন পার না পায়

দিন পরিবর্তন ডেস্ক

প্রকাশিতঃ ২০২৪-০৩-০৩ ১৯:৩০:০৪
...

স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে গেল রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে। শেষ হয়ে গেল ৪৬টি তাজা প্রাণ। এই অগ্নিদুর্ঘটনায় মারা গেলেন বুয়েটের ছাত্র, ইতালি প্রবাসী দম্পতি, শুল্ক কর্মকর্তা, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীসহ আরো মেধাসম্পন্ন অনেক মানুষ। প্রশ্ন উঠেছে, এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কারা? আগাম সতর্কতা থাকলে কি দুর্ঘটনা এড়ানো যেত? এইজন্য কি বিল্ডিংয়ের মালিক, নির্মাণ কাঠামো, আবাসিক-বাণিজ্যিক সম্মিলিত জটিলতা দায়ী?- এরকম নানা প্রশ্ন উঠে এসেছে। বর্তমান সময়ে দেশজুড়ে আলোচনা চলছে এই দুর্ঘটনা নিয়ে। সব মানুষেরই একই প্রশ্ন, কোনোভাবে কি এই দুর্ঘটনায় এড়ানো যেত না?

বেইলি রোডের ওই বিল্ডিংটিতে নানা কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। এই বিল্ডিংয়ের অব্যবস্থাপনা নিয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ কয়েকবার সতর্কবার্তা দিয়েছে। কোনো কিছুই আমলে নেয়নি বিল্ডিং কর্তৃপক্ষ। সব নিয়মনীতি ভেঙে ওপরে আবাসিক এবং নিচে বাণিজ্যিক কাজ পরিচালনা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, উপযুক্ত পরিবেশ না রেখে হোটেল-রেস্তোরাঁর মতো কাজকারবার পরিচালিত হয়েছে, যেখানে গ্যাস সিলিন্ডারসহ আগুনের ব্যবহার বেশি ছিল। এছাড়া দুর্ঘটনা ঘটলে জরুরি নির্গমনের পথ ছিল না। যার কারণে অগ্নিদুর্ঘটনায় নির্গত কালো ধোঁয়ায় সংকীর্ণ সিঁড়ির পথটি অন্ধকারে রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। উপস্থিত ক্রেতারা বেরোনোর পথ না পেয়ে অবরুদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে করুণ মৃত্যুকে বরণ করেছেন। অনেকে পথ না পেয়ে ওপরের ছাদে কোনোরকমে প্রাণ রক্ষা করেছেন।

একটি আবাসিক ভবনে দাহ্য পদার্থের ব্যবহার হয়, এমন বাণিজ্যিক কারবার দুর্ঘটনার মূল কারণ। তারপর সংকীর্ণ সিঁড়ি পথকে জীবনহানির মূল কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে সঙ্গে ডেকোরেশন ব্যবস্থা ও সিলিন্ডার গ্যাস অতি দ্রুত আগুনকে ছড়িয়ে পড়তে সহায়তা করেছে। এজন্য দায়ী বিল্ডিংয়ের মালিক কর্তৃপক্ষ। তারা অধিক অর্থ উপার্জনের চেষ্টায় আবাসিক ভবনের নিচে এমন হোটেল-রেস্তোরাঁকে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ করে দিয়েছে। বারবার সতর্ক করার পরও তারা ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের সতর্কবার্তা মান্য করেননি। এইজন্য আরো পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান করা দরকার এবং মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার জন্য আর কারা দায়ী, তাদের সবার বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আদালতে জনগুরুত্বপূর্ণ মর্মান্তিক ঘটনা হিসেবে বিচার করা দরকার।

পুরান ঢাকার নিমতলীতে আবাসিক ভবনের নিচে রাসায়নিকের গুদামে আগুন লেগে বহু মানুষের হতাহতের ঘটনায় দেশজুড়ে প্রশ্ন উঠেছিল আর যেন আবাসিক ভবনে ঝুঁকিপূর্ণ বাণিজ্যি গড়ে না ওঠে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায়ও ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় আজও দোষীদের বিরুদ্ধে বিচারিক রায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দ্বারে পৌঁছায়নি। যার ফলে স্বেচ্ছাচারিতার কারণে দুর্ঘটনাগুলোর পেছনে দায়ী ব্যক্তিরাই একরকম বিচারহীনতার সংস্কৃতির আড়ালে রয়ে গেছেন। তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়ার ধীরগতি ঘটে যাওয়া অপরাধকে দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে যাচ্ছে। এসব বিচার কখন শেষ হবে কেউ জানে না। যার ফলে মানুষের আইনের প্রতি অবহেলা ও স্বেচ্ছাচারিতায় বর্ধিত রূপে মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দেশের মানুষকে স্বাভাবিক জীবনধারার দিতে হলে আইন ও বিচারব্যবস্থাকে সবার আগে গতিশীল করতে হবে। তা না হলে মানুষের মূল্যবান জীবন মানুষের স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই অবলীলায় ধ্বংস হয়ে যাবে।

মানুষের সুশৃঙ্খলার জন্য আইন। সমাজ ও রাষ্ট্রকে সুশৃঙ্খল করতে হলে সর্বক্ষেত্রে আইনিপ্রক্রিয়াকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং আইন অমান্যকারীদের শাস্তি ও জেল-জরিমানার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আইনকে মান্য করা হলে নিমতলী, রানা প্লাজা ও বেইলি রোডের ঘটনাগুলো বারবার মানুষের দুঃখ-বেদনার কারণ হতো না।

আমরা মনে করি, বেইলি রোডের ঘটনা থেকে শুরু করতে হবে আইন অমান্যকারীরা যেন কোনোভাবেই রেহাই না পায়। এটা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে।