২৯-মার্চ-২০২৪
২৯-মার্চ-২০২৪
Logo
জাতীয়

শুরুতে সাত দিন, বাড়তে পারে লকডাউন

দিন পরিবর্তন ডেস্ক

প্রকাশিতঃ ২০২১-০৪-০৪ ০৬:২৩:৪৩
...

করোনা মহামারি সামালাতে আবারও লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার৷ আপাতত ৭ দিনের লকডাউন দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের৷

তবে চলমান পরিস্থিতিতে প্রাথমিকভাবে মানুষের চলাফেরা সীমিত করার কথা বলছে সরকার৷ প্রয়োজনে লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়ানো হতে পারে বলে জানানো হয়েছে৷ জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আমরা বলছি, আপাতত ৭ দিনের জন্য মানুষের মুভমেন্টটা বন্ধ করতে৷ এতে যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসে তাহলে এটা বাড়ানো হবে৷

এদিকে, লকডাউন নিয়ে ইতিমধ্যে উঠেছে নানা প্রশ্ন৷ এসময় পরিবহণ ব্যবস্থা, গার্মেন্টসসহ অন্যান্য শ্রমখাত কিংবা নিম্নবিত্তের উপর লকডাউনের প্রভাব সরকার কীভাবে বিবেচনা করছে সে বিষয়গুলো এখনো স্পষ্ট নয়৷ আর সাত দিনের লকডাউন সংক্রমণে ঠেকাতে কতোটা কার্যকর উঠেছে সে প্রশ্নও৷

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, আসলে লকডাউন মানে কী? ৭ দিনের লকডাউন দিয়ে কী হবে? বিশ্বের কোথাও ৭ দিনের লকডাউন দেওয়া হয়? এ থেকে আমরা কী অর্জন করব?

অধ্যাপক নজরুল বলেন, প্রয়োজনটা কী? কী দেখে তারা প্রয়োজন বুঝবেন? আসলে সারা বিশ্বেই লকডাউনের একটা সংজ্ঞা আছে৷ এটা অন্তত ১৫ দিনের জন্য হতে হবে৷ আমাদের এখানে কী সেটা মানা হয়৷ জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলছেন, শিল্প কলকারখানা খোলা থাকবে৷ এভাবে কি লকডাউন হয়৷

গত বছর লকডাউনের কারণে চাকরি হারিয়েছিলেন অনেকেই৷ অনেকেই জীবিকার সন্ধানে লকডাউন ভেঙ্গে বেড়িয়ে এসেছিলেন৷ এসব বিষয় সরকার কীভাবে বিবেচনায় নিচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ হোসেন বলেন, দেখেন ৭ দিনে এমন কিছু হবে না৷ তারপরও যদি প্রয়োজন হয় সরকার সেটা করবে৷ আমরা আসলে লকডাউনটা শুরু করতে চাই, তারপর প্রয়োজন হলে যেটা করা দরকার সেটা করব৷ সরকারকে তো অনেক কিছুই চিন্তা করতে হয়৷

এর আগে শনিবার দুপুরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় লাকডাউন পরিকল্পনা নিয়ে কিছু আভাস দেন৷ তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায়, সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার দু-তিন দিনের মধ্যে সারা দেশে এক সপ্তাহের লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে৷ সেক্ষেত্রে লকডাউন চলাকালে শুধু জরুরি সেবা দেয় এমন প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে৷ আর শিল্পকারখানা খোলা থাকবে যাতে শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন শিফটে কাজ করতে পারে৷

প্রসঙ্গত, সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনসহ নানামুখী পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা৷ নতুন করে দেওয়া লকডাউন দীর্ঘায়িত করা না গেলে অধিক আক্রান্ত অঞ্চলগুলো চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার পরমর্শ তাদের৷ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুস্তাক হোসেন বলেন, সংক্রমণের এক বছর পর বড় পরিসরে লকডাউন দেওয়াটা কঠিন৷ এখন আসলে সরকার ৭ দিনের জন্য দিচ্ছে, কিন্তু এটা বেশিদিন বাড়ানো যাবে না৷ এখন যেটা করা দরকার তা হলো বেশি সংক্রমিত এলাকা ঠিক করে সেখান থেকে জনগণের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা৷ শুধু লকডাউন দিলেই হবে না, মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে৷ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন ঘর থেকে বের হতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে৷ কিন্তু লকডাউন দেওয়ার পরও যদি মানুষের চলাচল স্বাভাবিক থাকে তাহলে এটা দিয়ে লাভ হবে না৷ পাশাপাশি খেটে খাওয়া মানুষের কথাও চিন্তা করতে হবে৷ তাদের ঘরে থাকতে হলে, তাদের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে৷ তাহলেই এটা কার্যকর হবে৷

উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরুতে সারা দেশে শুরু হয় করোনা ভাইরাসের টিকাদান৷ কিন্তু মার্চের শুরু থেকে দেশে আবার নতুন রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ সর্বশেষ শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা একটু কমলেও বেড়েছে মৃত্যু৷ এ সময় ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২১৩ জন৷ একই সময়ে দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে আরও ৫ হাজার ৬৩৮ জন৷ ফলে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬ লাখ ৩০ হাজার ২৭৭ জন৷ -ডিডাব্লিউ