১৪-অক্টোবর-২০২৪
১৪-অক্টোবর-২০২৪
Logo
ঢাকা

ইজারা শর্ত ভেঙ্গে ড্রেজারে বালু উত্তোলন, নদী গর্ভে বিলীন কৃষি জমি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিতঃ ২০২৩-০৯-১৯ ১৬:৫১:২৮
...
এস.এম.নুরুজ্জামান, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি :
ইজারার বালু মহল,অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলন,শতশত কৃষি জমি নদী গর্ভে বিলীন, সর্বহারা হয়ে পড়েছে ৩ গ্রামের হাজার  পরিবার। ইজারার নামে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে কেটে নেয়া হচ্ছে কালীগঙ্গা  নদী পারের কৃষি জমি। প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক সহ বিভিন্ন দপ্তরে এলাকাবাসীর অভিযোগ। তবুও থামছে না কালীগঙ্গা নদীতে  ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন। 
জানাগেছে, মানিকগঞ্জে ইজারার নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কালিগঙ্গা  নদীতে ড্রেজারে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। প্রতিদিন ৬টি ড্রেজার দিয়ে নদী পাড়ের কৃষি জমি ঘেঁষে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে করে চরে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হবার পাশাপাশি তীরবর্তী পৌলি,আন্দারমানিক,চর বেউথা  হুমকির মুখে পড়েছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করছে।
জানা যায়, সম্প্রতি জেলার পৌর  এলাকার বেউথা বালু মহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। এই বালু মহালেরই ইজারা পেয়েছেন মানিকগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম।
স্থানীয়রা জানান,  বালু মহলের ইজারা নিয়ে ৩ গ্রামের শতশত কৃষি জমি কেটে নিচ্ছে প্রভাবশালী নেতারা।  অতিরিক্ত বালু পাবার লোভে নদীর চর ঘেঁষে বালু উত্তোলন শুরু করে ইজারাদার। এমনকি সুযোগ বুঝে ড্রেজার লাগিয়ে তারা চর বেউথা, আন্দারমানিক,পৌলি চরের ফসলি জমির মাটি কেটে নিতে থাকে। এতে করে  কৃষকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এছাড়া ড্রেজার দিয়ে মাটি কেটে ফেলার কারণে চরে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে নদীর তীরবর্তী চর বেউথা,আন্দারমানিক,পৌলি গ্রামের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয় গ্রামবাসীর মনে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পৌর এলাকার কালীগঙ্গা নদীতে কৃষকের ফসলি জমি ঘেঁষে ৬টি ড্রেজারের সাহায্যে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই চরের বিরাট অংশের ফসলি জমি কেটে ফেলা হয়েছে। কাটা অংশে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক ভাঙন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি ড্রেজার প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। সে হিসেবে প্রতিদিন প্রায় ৬ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলিত হচ্ছে। এভাবে চর ঘেঁষে বালু উত্তোলন করতে থাকলে খুব অল্প সময়েই চরের একটি অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে তীরবর্তী গ্রাম হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়,  প্রতিবছর  ধান, ভূট্রা,পাট, গম,  সরিষাসহ  নানান জাতের ফসল হতো এসব জমিতে। কালীগঙ্গা নদীর দুইপাশে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ২টি ব্রীজ। অপরিকল্পিত ভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় হুমকিতে রয়েছে এ দুটি ব্রীজ।
চর বেউথা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দুস সামাদ বলেন, আমাদের ৩ গ্রামের ফসলি জমি কেটে নিচ্ছে বালু ব্যবসায়ীরা। সর্বহারা করে দিচ্ছে আমাদের পরিবারকে। আমাদের সেচ প্রকল্পের অর্ধেক জমি কেটে নিয়ে গেছে। এখন আমাদের ভিটে মাটি ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় এসেছে। আমরা এই অবৈধ বালুকাটা বন্ধের দাবীতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছি। তবুও বন্ধ হচ্ছে না অবৈধভাবে বালুকাটা। 
আরেক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আমিরুল ইসলাম আক্কাস বলেন, প্রভাবশালী নেতারা ইজারার নামে আমাদের কৃষিজমি কেটে নিচ্ছে। যে জমিতে আমরা ইরি, ভুট্টা পাট সহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। সেই জমি এখন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া আমাদের রয়েছে জোসেফ মেমোরিয়াল হসপিটাল প্রতিষ্ঠান মসজিদ মাদ্রাসা এবং স্বপ্নের কালিগংগা ব্রিজ। এখন এইসব স্থাপনা গুলো হুমকির মুখে পড়েছে। অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলনের ফলে ৩ গ্রামের শত শত  বিঘা কৃষি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। কৃষিজমি হারিয়ে এখন আমরা সর্বহারা। অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলন বন্ধে আমরা এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রী কাছে    জোর দাবি জানাচ্ছি। 
বেউথা বালু মহালের ইজারাদার মো: জাহিদুল ইসলাম বলেন, সরকারকে ৮ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে বালু মহাল ইজারা নিয়েছি। নদী সিকস্তি  জায়গায় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছি। অবৈধভাবে কোন জায়গায় বালু উত্তোলন করা হচ্ছে না। 
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতিশ্বর পাল বলেন, ইতিমধ্যে ওই এলাকায় অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে অভিযান করা হয়েছে। শীঘ্রই খোঁজখবর নিয়ে আবারো অভিযান চালানো হবে।