২৯-মার্চ-২০২৪
২৯-মার্চ-২০২৪
Logo
ধর্ম

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিতঃ ২০২২-১০-২৭ ১২:১৫:৩৫
...

মহান আল্লাহ অগণিত মাখলুক সৃষ্টি করেছেন। তাদের প্রতি ভালোবাসা, অনুগ্রহ প্রদর্শন মুমিনের ইমানের দাবি এবং আল্লাহর নির্দেশ। যদি আমরা আল্লাহর সৃষ্টিকে ভালোবাসি, আল্লাহ আমাদের ভালোবাসবেন। আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি অনুগ্রহ করলে তিনি তার প্রতি অনুগ্রহ করবেন। 

আল্লাহ বলেন, ‘কে আছে যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে? তাহলে আমি একে বহুগুণে বৃদ্ধি করব এবং তার জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।’ সুরা হাদিদ, আয়াত ১১।  এ আয়াতে আল্লাহ উত্তম ঋণ বলে মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন। 

আল্লাহ বলেন, ‘দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান করে তাদের দেওয়া হবে বহুগুণ বেশি এবং তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।’ সুরা হাদিদ, আয়াত ১৮।

আল্লাহ আরও বলেন, ‘ঋণগ্রহীতা যদি অভাবগ্রস্ত হয় তাহলে তাকে তার সচ্ছলতা পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া উচিত।’ সুরা বাকারা, আয়াত ২৮০।

মূলত অন্যের প্রয়োজন পূরণ করা কিংবা অন্যের বিপদে তার পাশে দাঁড়ানো তখনই সম্ভব যখন কারও মনে আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি দয়া, ভালোবাসা ও অনুগ্রহ জাগ্রত থাকবে। আর এ অনুগ্রহ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে করলে তার কানাকড়িও মূল্য নেই বরং শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করলে তার জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। 

একটি হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যারা অন্যের প্রতি দয়া করে আল্লাহও তাদের প্রতি দয়া করেন। তোমরা জগদ্বাসীর প্রতি দয়া কর, আকাশের অধিপতি আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ আবু দাউদ।

যদি আমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাই তাহলে তাঁর সৃষ্টিকে অবশ্যই ভালোবাসতে হবে। কারণ যখন কেউ কাউকে ভালোবাসে তখন তার সবকিছু তার কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে এমনকি তার ঘরদোরও। 

মজনু তার প্রিয়তমা লাইলির ভালোবাসায় বলেছিল- ‘আমি যখন লাইলির বাড়ির পাশ দিয়ে যাই তখন এ দেয়ালে চুমু খাই, ও দেয়ালে চুমু খাই। অথচ তার বাড়ির ভালোবাসা আমার হৃদয়কে আকর্ষণ করেনি। আকর্ষণ করেছে এ বাড়ির অধিবাসী লাইলির ভালোবাসা।’ 

তাহলে যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভালোবাসবে তার কাছে কি আল্লাহর সব সৃষ্টি প্রিয় হয়ে উঠবে না? আল্লাহকে ভালোবাসি অথচ তাঁর প্রিয় সব সৃষ্টিকে ভালোবাসি না, তাদের প্রতি হৃদয়ে কোনোরূপ মমতা অনুভব করি না এ কেমন ভালোবাসা। 

এ কারণে মাওলানা রুমি (রহ.) বলেছেন, ‘মজনু তো লাইলির ভালোবাসার সুবাদে লাইলির শহরের কুকুরকে পর্যন্ত ভালোবেসে ছিল। অথচ তুমি আল্লাহকে ভালোবেসে তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবাসতে পার না, তাহলে কি আল্লাহর প্রতি তোমার ভালোবাসা মজনুর ভালোবাসার চাইতেও দুর্বলতর?’ 

সুতরাং আমরা আল্লাহর ভালোবাসা যদি পেতে চাই তাহলে তাঁর সব সৃষ্টিকে ভালোবাসা ও অনুগ্রহ করার বিকল্প নেই। বুখারিতে আছে : ‘এক ব্যভিচারী নারী, তার জীবনটাই কেটেছে পাপকর্মে। একবার কোথাও যাচ্ছিল, পথে লক্ষ্য করল চরম তৃষ্ণায় কাতর একটি কুকুর জিব দিয়ে মাটি চাটছে। পাশেই একটি কুয়া ছিল, মহিলা তার পায়ের চামড়ার মোজা খুলে মোজা দিয়ে কূপ থেকে পানি তুলে কুকুরটিকে পান করায়। তার এ আচরণ আল্লাহ এতটাই পছন্দ করেন যে রসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা ওই মহিলার সারা জীবনের সব পাপ ক্ষমা করে জান্নাতি বলে ঘোষণা করেছেন।’ 

সুতরাং আমরা সব সময় সব সৃষ্টির প্রতি অনুগ্রহ করব, কারণ সৃষ্টির প্রতি অনুগ্রহ, মমতা প্রদর্শন ইসলামের অমর শিক্ষা। বিখ্যাত একজন বুজুর্গ ছিলেন, তিনি একদিন দোয়াত-কলম দিয়ে কিতাব লিখছিলেন। লেখার জন্য তিনি কলমটি মাত্র দোয়াতে চুবিয়ে তুলেছেন আর তখনই একটি মাছি এসে কলমে বসে পড়ল এবং কলমের কালি চুষতে লাগল, তখন তিনি লেখা বন্ধ রেখে মাছিটিকে তৃপ্তিসহকারে পান করার সুযোগ করে দিলেন, কারণ মাছিটি ছিল বড় তৃষ্ণার্ত, আল্লাহর ক্ষুদ্র একটি মাখলুক মাছির প্রতি সামান্য অনুগ্রহ প্রদর্শনের কারণে আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাত দান করেছেন। 

সুতরাং আমরা জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহর সৃষ্টিকে ভালোবাসব; তাহলে আমরাও আল্লাহর ভালোবাসা পাব।