২৯-মার্চ-২০২৪
২৯-মার্চ-২০২৪
Logo
ফুটবল

ফুটবলে ইতিহাস নারীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিতঃ ২০২২-০৯-২০ ১৮:২৪:৪২
...

দৃষ্টিনন্দন আর শৈল্পিক ফুটবলের স্বাক্ষর রেখে আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচ থেকেই জয়ের সঙ্গে গোলের ঝড় তুলেছিল বাংলাদেশ।  ফাইনাল পর্যন্ত বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা করলেন ২৩ গোল, আর বিপক্ষে হয়েছে মাত্র ১ গোল।  সব ম্যাচে জয় আর অপরাজিত থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা হলো সাবিনারা।  নারী তথা বাংলাদেশের ফুটবলে সৃষ্টি হলো নতুন ইতিহাস।  সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অসাধারণ নৈপূণ্য দেখিয়ে স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে সহজ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাদেশ গড়লো সেই ইতিহাস।  হয়তো এই শিরোপার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ফুটবল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে পথচলা শুরু করবে।  

সাফ নারী টুর্নামেন্টের বিগত সব আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারত।  এবার সেই ভারত বিহীন ফাইনাল হলো।  নেপাল বিগত সময়ে চার বার ফাইনাল খেললেও তাদের শিরোপা জেতা হয়নি।  বাংলাদেশের একমাত্র ফাইনালেও ছিল ভারত বাধা।  তাই দুই নারী দলের সামনে ছিল দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের হাতছানি।  আর সেখানে বাংলাদেশই সফল হলো।  নেপালের বিপক্ষে সাবিনারা এই প্রথম জয় পেল।  এবারো ফাইনালে হারলো নেপাল।  

দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে বাংলাদেশের নারীদের শ্রেষ্ঠত্ব এবারই প্রথম।  এর আগে ২০১৬ সালে ভারতের শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে হেরেছিল।  এবার কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।  সিনিয়র ফুটবলে কখনো ভারত ও নেপালকে না হারানো বাংলাদেশ এবার তাদের হারিয়েছে।  গ্রুপ পর্বে হারিয়েছে ভারতকে আর ফাইনালে নেপালকে।  ফাইনালের জয়ের নায়ক কৃষ্ণা রাণী সরকার।  তার জোড়া গোলে বাংলাদেশ নেপালকে বধ করে। 

ফাইনালের শুরু থেকেই খেলা নিয়ন্ত্রণ করেছে বাংলাদেশ।  ১৪ মিনিটে শামসুন্নাহার জুনিয়র দুর্দান্ত গোল করেন।  মনিকা চাকমার ক্রস থেকে শামসুন্নাহার জুনিয়র কোনাকুনি প্লেসিংকে করে বাংলাদেশকে লিড এনে দেন। 

এক গোলে পিছিয়ে পড়ে পুরো দশরথ স্টেডিয়াম স্তব্ধ হয়ে পড়ে।  উজ্জীবিত প্রায় ১৫ হাজার নেপাল সমর্থকরা কিছুক্ষণের জন্য নিশ্চুপ হয়ে যান।  নেপাল ফুটবলাররা ম্যাচে সমতা আনার সর্বাত্মক চেষ্টা করে।  বিশেষ করে ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে তারা বেশ কয়েকটি সংঘবদ্ধ আক্রমণ করে।  বাংলাদেশের গোলরক্ষক রুপনা চাকমা দুটি দারুণ সেভ করেছেন। 

নেপালের জালে বাংলাদেশ দ্বিতীয় গোল দেয় ৪২ মিনিটে।  মিডফিল্ড থেকে বাড়ানো এক থ্রু পান কৃষ্ণা রাণী সরকার।  বক্সের এক প্রান্তে আনমার্কড থাকা কৃষ্ণা আগুয়ান গোলরক্ষককে পরাস্ত করে বল জালে জড়ান।  বাংলাদেশের ডাগআউট আবার উৎসবে মাতে।   ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করে বাংলাদেশ।

দ্বিতীয়ার্ধে স্বাগতিক নেপাল বেশ চাপে রাখে বাংলাদেশকে।   সেই চাপের ধারাবাহিকতায় ৭০ মিনিটে আনিতা বেসন্ত গোল করে নেপালকে ম্যাচে ফেরান।  সংঘবদ্ধ এক আক্রমণে বক্সের মধ্যে প্রবেশ করে কোনাকুনি শটে রুপনা চাকমাকে পরাস্ত করেন বেসন্ত।  স্কোর হয় ২-১। 

নেপাল আরও এক গোল দিয়ে সমতা আনার চেষ্টা করছিল।   বহু আক্রমণ হয়েছে বাংলাদেশের ডি-বক্সে।  তবে গোল তারা আর পায়নি।   উল্টো বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রাণী সরকার নিজের ২য় গোল করে বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে দেন। 

৭৭ মিনিটে মিডফিল্ড থেকে পাওয়া থ্রুতে তিনি আগুয়ান গোলরক্ষককে দারুণভাবে পরাস্ত করেন।  কৃষ্ণার এই গোলের পর কোচ ছোটনের কপাল থেকে চিন্তার ভাঁজ একেবারে মুছে যায়।  ৩-১ গোলে এগিয়ে যায় সাবিনারা। 

ম্যাচের বাকি সময়ও নেপাল গোলের জন্য চেষ্টা করে।  তবে বাংলাদেশ বেশ ভালোভাবে সামলেছে তাদের আক্রমণ।  বিশেষ করে গোলরক্ষক রুপনা চাকমা দারুণ খেলেছেন।  পুরো ম্যাচে তিনি দুর্দান্ত কয়েকটি সেভ করেছেন।  না হলে নেপাল অন্তত আরো একটি গোল পেতেই পারত। 

ইতিহাস গড়ার হাতছানি নিয়েই মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ।  প্রতিপক্ষ নেপালের বিপক্ষে এতদিন জয় ছিল অধরা।  কিন্তু যে দিনটা বাংলাদেশের, যে দিনটা কৃষ্ণা-শামসুন্নাহারদের, সেদিন তো বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়বেই।  কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ।