২৮-মার্চ-২০২৪
২৮-মার্চ-২০২৪
Logo
অপরাধ

ছয় মাসে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার ১২ হাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিতঃ ২০২২-০৮-১৮ ১৯:২৯:২০
...

দিন দিন রাজধানীতে বাড়ছে মাদক কারবারি ও খুচরা বিক্রেতার সংখ্যা।  পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মাদকসেবীও।  চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মাদক বিক্রি ও সেবনের দায়ে ১১ হাজার ৮৭৭ জনকে গ্রেপ্তারের করা হয়েছে।  ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ১২ হাজার মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।  মামলা হয়েছে সাড়ে আট হাজারের বেশি।  গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মামলা ও আসামির সংখ্যা বেড়েছে হাজারের বেশি।  আর যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে প্রায় ২৫০ জন ডিলার, প্রায় সাড়ে ৩ হাজার খুচরা বিক্রেতা, ৬ হাজারের মতো নিয়মিত মাদকসেবী ও বাকিরা বিভিন্ন সময় মাদক নিতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে।  

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র উপ-পুলিশ কমিশনার ফারুক হোসেন জানান, এ সময়ের মধ্যে মাদক মামলা হয়েছে ৮ হাজার ৬২৪টি।  প্রতি মাসে গড়ে এক হাজার ৪৩৭টি মামলা হয়েছে।  যা মোট মামলার ৫৫ শতাংশ।  গত বছরের চেয়ে এবার ছয় মাসে এক হাজার ১৮১টি মামলা ও এক হাজার ৩২৭ জন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে বেশি।  

অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে ২১ লাখ ২০ হাজার ২৯১টি ইয়াবা, ৩৫ কেজি ১৪০ গ্রাম ১৩ পুরিয়া হেরোইন, ৭ হাজার ১১২ কেজি ৭৬ গ্রাম গাঁজা, ২৭ হাজার ২৪০ বোতল ফেনসিডিল, ৩৬ হজার ৭৩১ ক্যান বিয়ার, ২ হাজার ৯০৪ লিটার দেশি মদ, ২ হাজার ৪৩৯ বোতল ও ২৮১ লিটার ৩৫০ মিলি. বিদেশি মদ, ৪ হাজার ৯৪২ লিটার ৫০০ মিলি. চোলাই মদ, ৬ কেজি ৬৫৩ গ্রাম আইস, ১২ হাজার ৫৭৭টি অ্যামপুল ইনজেকশন, ৯০ বোতল এমকেডিএল, ৬৬ হাজার ৫৮টি ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট, ৫০ বোতল ইস্কার্ফ ও ৭৫ গ্রোম কোকেন উদ্ধার হয়।  এগুলোর আনুমানিক বাজার মূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা।  

আর গত এক বছরে শুধু রাজধানীতে মাদক বিক্রি ও সেবনের দায়ে ২২ হাজার ৬৮৬ জনকে গ্রেপ্তারের করা হয়েছে।  এর মধ্যে গত ছয় মাসে ২ শতাংশ বেশি।  আর মাদক মামলা হয়েছে ১৬ হাজার ২১৩টি।  প্রতি মাসে গড়ে এক হাজার ৩৫১টি, যা চলতি বছরে ৩ শতাংশ বেশি। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছরের মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১০ হাজার ৬৬ কেজি ২৫৪ গ্রাম গাঁজা, ৯৯ কেজি ৮২১ গ্রাম হিরোইন, ৫০ লাখ ৫৬ হাজার ৬২১টি ইয়াবা ট্যাবলেট, ৫৮ হাজার ৭১৭ ক্যান বিয়ার, ৫৪ হাজার ৩৯১ বোতল ফেনসিডিল, ৩৩ হাজার ৮৫০ পিস অ্যাস্পুল ইনজেকশন, ৫ হাজার ১৩০ বোতল ও ৫৫৮ ক্যান ৭৭৫ মিলি. বিদেশি মদ, ১০ হাজার ৭৭২ লিটার দেশি মদ, ১৬ হাজার ৩৮৭ লিটার চোলাই মদ, ১৭ হাজার ৫৭৫টি ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট, ৩ কেজি ২০২ গ্রাম আইস, ১০ কেজি আফিম, ৩ হাজার ৩০০ পিস সিন্ডা ট্যাবলেট, ২৫ কৌটা ড্যান্ডি, ২২ কেজি শিসা, ৫.১২ গ্রাম এলএসডি, ২.১৯ গ্রাম এমফিটামিন, ১.৩ গ্রাম ডিএমডি, ২২৪ বোতল এমকেডিএল, ১৮৯ বোতল ইস্কার্ফ ৬ হাজার ৫০০ পিস মরফিন ট্যাবলেট, ১২৬ গ্রাম ডব ও ৩০ লিটার আফিয়াম।  

গোয়েন্দারা জানান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক স্তরের নিরাপত্তার চাদর ভেদ করে ঢাকায় আসছে মাদকের চালান।  তবে মাদক নিয়ে যারা আটক হন, তাদের অধিকাংশ খুচরা বিক্রেতা, বাহক ও সেবনকারী। 

এছাড়া ঢাকা মহানগর এলাকায় আশঙ্কজনকভাবে বেড়েছে আইসের চালান।  গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের ছয় মাসে আইসের চালান ধরা পড়েছে দ্বিগুণ।  সাধারণত দেশে গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবার মতো মাদকের চাহিদা বেশি থাকে।  এখন এর সঙ্গে ‘এলএসডি’, ‘ক্রিস্টাল মেথ, বা ‘আইসের’ মতো মাদকের চাহিদা টেক্কা দিচ্ছে।  ভয়াবহ এই মাদক দুটির সেবনকারী বাড়ছে বলেই ভাষ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।  

তবে এবার ৯ ধরনের মাদক উদ্ধার হয়নি।  গত বছর ২৩ ধরনের মাদক উদ্ধার করা হলেও এ বছর ১৪ ধরনের মাদক উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। 

এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, করোনার সময় মাদকের কারবারে কিছুটা ভাটা পড়লেও সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাদক চোরাকারবারিরা নতুন নতুন কৌশলে সক্রিয় হয়েছে।  ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে শতাধিক পয়েন্ট ও মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে মাদক দেশে প্রবেশ করছে।  সেই সঙ্গে ৬টি জেলার সীমান্তে কয়েকটি চক্র সক্রিয় আছে। 

দেশে কোথাও মাদক উৎপাদন হয় না বলে জানান ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।  যৎসামান্য গাঁজার গাছের খোঁজ পাওয়া যায়।  তাও নির্মূল করা হয়।  দেশ থেকে মাদক নির্মূলের জন্য আগে সীমান্ত দিয়ে মাদক প্রবেশ রোধ করতে হবে।  নির্দিষ্ট কিছু পয়েন্ট দিয়েই তো দেশে মাদক প্রবেশ করছে।  পরে তা ছড়িয়ে যাচ্ছে সারা দেশে।  বলেন মহানগর পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।  

চোরাকারবারিরা অভিনব সব কৌশলে মাদক সরবরাহ করছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়।  সবজির গাড়ি থেকে মাছের ব্যারেল এমনকি মাদকের চালান আসছে গাড়ির জ্বালানি ট্যাঙ্কিতে করে।  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিরোধের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চোরকারবারিরা রাজধানীতে কৌশল বদলাচ্ছে। 

দেশে এখন মাদকসেবীদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।  এ ছাড়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তো আছেই।  মাদকসেবী উঠতি বয়সী তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে কিশোর অপরাধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধে। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে এখন পর্যন্ত ২৪ ধরনের মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।  তবে এর মধ্যে ১৫ ধরনের মাদক বেশি সেবন করা হচ্ছে। 

আবার র্যাব-পুলিশের তথ্যে দেখা যাচ্ছে ৬ থেকে ১০ ধরনের মাদকের ব্যবহার বেশি।  ভারতের সীমান্ত এলাকা দিয়ে আগে ফেনসিডিল আসত বেশি।  এখন ইয়াবা আসার মাত্রা বেড়েছে।  মিয়ানমার থেকে ইয়াবার সঙ্গে আসছে আইসও।  এছাড়াও সীমান্ত এলাকার পাশাপাশি উপকূলকেও মাদক চোরাচালানে ব্যবহার করছে পাচারকারিরা।  

ঢাকা মহানগর এলাকায় বেশি মাদক ও আসামি গ্রেপ্তার হওয়াকে পুলিশের সফলতা মনে করছেন ডিএমপি মুখপাত্র উপ-পুলিশ কমিশনার ফারুক হোসেন।  তিনি বলেন, মাদক বেশি উদ্ধার হওয়া মানেই পুলিশ কাজ করছে।  অস্ত্র ও মাদক যত উদ্ধার হবে, যত মামলা হবে।  বুঝা যাবে পুলিশ কাজ করছে।