দিনপরিবর্তন প্রতিনিধি, বাউফল (পটুয়াখালী)
পটুয়াখালীর বাউফলে রসালো ফল তরমুজের আগাম চাষে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন কৃষক। গত মৌসুমে লোকসান হওয়ায় এবছর আগাম জাতে ছুটছেন তারা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তরমুজ চাষে নিরব বিপ্লব ঘটতে পারে চরাঞ্চলীয় বাউফল সীমানায়।
উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, খুব ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষক ও কৃষাণী। একদিকে আগাছা কেটে ক্ষেত পরিষ্কার করছেন তারা অপরদিকে চলছে ট্রাক্টরের মাধ্যমে চাষাবাদের কাজ। একই সাথে চলছে বীজ বপনের কাজ। প্রতিটি জমিতে ১০ থেকে ৫০জন পর্যন্ত কর্মচারী কাজ করছেন রাত দিন করে। কত দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে ক্ষেত প্রস্তুত কারা যায় সে প্রতিযোগীতায় চলছে কর্মজজ্ঞ। নারী, শিশু, মধ্যবস্ক ও বৃদ্ধ সকল শ্রেনীর লোক কাজ করছেন মাঠে। কোন কোন চাষী ৩-৫শত একর পর্যন্ত জমিতে তরমুজ চাষ করবেন বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে চাষিরা এসে জমি লিজ নিয়ে তরমুজ চাষ করে থাকেন। এবছরও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে সবচেয়ে ভোলা জেলার লোক তরমুজ চাষে বেশি অংশগ্রহণ করেছেন। স্থনীয় চাষিরা তরমুজ চাষের কৌশল সম্পর্কে অবগত না হওয়ায় তাদের আগ্রহ কম। তবে এবছর বেশ স্থানীয় চাষি দেখা যাচ্ছে।
বাউফল সীমানায় চন্দ্রদ্বীপ, কালাাইয়া, কেশবপুর, ধুলিয়া, কাছিপাড়া, কালিশুরি ও বগা ইউনিয়নের প্রায় ২৫টি চরে রসালো ফল তরমুজ চাষ করতে জমি প্রস্তুতের কাজ চলছে। এ-সব চরঅঞ্চল বেছে নেয়ার কারন হিসাবে কৃষকরা বলেন, এই উপজেলায় ছোট বড় অসংখ্য চর থাকায় চাষকৃত ক্ষেতে মিঠা পানির সেচ খুব সহজে দেয়া যায় ফলে চাষাবাদ করনে খরচ কম হয়ে এবং ফল মিষ্টি ও সুস্বাদু হয়ে।
এবছর ৩ধাপে তরমুজ চাষ করা হবে বলে জানিয়েছেন একাধিক কৃষক। আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে প্রথম ধাপে আগাম জাতের তরমুজ চাষের জন্য জমি অনাবধি রাখা হয়েছিলো। এসব জমি প্রস্তুত হয়ে চলছে চারা রোপনের কাজ। দ্বিতীয় ধাপে কিছু জমিতে ধান কাটার কাজ চলছে। এসব জমি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রস্তুতের কাজ চলছে।
৮টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলে ৪হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনা ১হাজার হেক্টর বেশি হলেও গত তিন বছরের তুলনায় তিন গুণেরও বেশি। প্রতিবছরই লাফিয়ে বাড়ছে তরমুজের চাষ। এভাবে বাড়তে থাকলে তরমুজ চাষে বিপ্লব ঘটতে পারে দক্ষিণের জনপদ বাউফলে।
৩য় ধাপের বেশির ভাগ জমিতে এখনও ধান কাটা শুরুই হয়নি। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ধান কাটা শুরু হবে। আগামী ১মাসেরও বেশি সময় ধরে চলবে এসকল জমিতে তরমুজ চাষের কাজ।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এবছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪হাজার হেক্টর জমি। যা গত বছর ছিল ২হাজার ৫শত হেক্টর।
ভোলার চাষী বেল্লাল হোসেন জানান, তিনি গত বছরও এখানে চাষাবাদ করেছেন। এবছর তিনি ১০কানি (৩০ একর) জমি লিজ নিয়ে চাষ শুরু করেছেন। আগের বছর বৈরি আবাহাওয়ার কারণে লোকসান গুনেছেন তিনি। ভাল ফলন ও বৈরি আবহওয়ার হাত থেকে রেহাই পেতে এবছর আগাম চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিন। তার ক্ষেতে প্রায় ২০জন কর্মচারী নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে চলছেন।
নুর ইসলাম (৪৫) নামের অপর এক স্থানীয় চাষী জানান, গত বছর বৈরি আবহাওয়ার কারণে তাদের লেকসান গুনতে হয়েছে। এবছর তারা ভাল ফলনের আশা করছেন।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রেদোয়ান উদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘যদিও আমরা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি কিন্তু এবছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। কৃষি সম্প্রসারণে আমরা কাজ করে চলছি। তরমুজ চাষীদের সকল ধরনের সহযোগিতার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL